এবার কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে মন্তব্যের জেরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্কে উষ্ণতা চলছে। এর মধ্যেই নতুন করে আলোচনায় তিস্তা নদীর পানি বণ্টন ইস্যু। গত শুক্রবার বিধানসভায় এ নিয়ে ফের সরব হয়েছেন মমতা।
দিল্লি থেকে ফিরে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন ওপার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে পানি দেওয়া নিয়ে আপত্তি নেই। বাংলাদেশ আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। অনেকেই এটাকে মিসলিড করছে। কিন্তু এই পানি যখন পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে যায়, তখন বাংলার সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। তিনি দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘নীতি আয়োগ-এর নবম গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মমতা ব্যানার্জি আরও বলেন, আমাদের কাউকে জিজ্ঞাসা না করেই তিস্তার পানি দিয়ে দেওয়া হলো। এর ফলে গরমকালে খাবার পানি পর্যন্ত পাবে না উত্তরবঙ্গের মানুষ। মমতা যোগ করেন, ‘ফারাক্কা চুক্তি পুনর্নবীকরণ করা হলো, আমাদের কিছু জানানো হলো না। ১৯৯৬ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়ার শাসনকালে যখন প্রথম ফারাক্কা চুক্তি হয়, তখন পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ৭০০ কোটি রুপির একটা প্যাকেজ দেওয়ার কথা ছিল। এই চুক্তির বদলে যাতে মুর্শিদাবাদ, মালদায় গঙ্গার ভাঙন রোধ করা যায়, সে ব্যাপারে কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু কেন্দ্র সেই অর্থও দেয়নি। আর তা না দেওয়ার কারণে প্রতি বছর বন্যা ভয়াল আকার ধারণ করে। আবার ফারাক্কা শুকিয়ে গেলে ড্রেজিং পর্যন্ত করা হয় না। দামোদর ভ্যালি করপোরেশন (ডিভিসি) শুকিয়ে যাচ্ছে, ফলে বন্যার রূপ নিচ্ছে। এসব বিষয় কেন্দ্রীয় সরকারেরই দেখা উচিত।’
এদিকে বিধানসভায় ইন্দো-ভুটান যৌথ নদী কমিশন তৈরির বিষয়েও দাবি জানিয়েছেন মমতা। বর্ষায় উত্তরবঙ্গের তরাই-ডুয়ার্স এলাকাকে বন্যা পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষা করতে বিশেষ এই প্রস্তাব নিয়ে কথা বলেন তিনি। লিখিত ও মৌখিক দাবিতে মমতা ব্যানার্জি বলেন, ভুটান থেকে অতিবৃষ্টিতে যে পানি নেমে আসে তাতে উত্তরবঙ্গের অনেকটা অংশ প্লাবিত হয়। তাই ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশন করা দরকার।
অপরদিকে এই প্রস্তাব নিয়ে বিধানসভার আলোচনায় রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, যদি ইন্দো-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন, ইন্দো-নেপাল যৌথ নদী কমিশন থাকতে পারে, তা হলে ভুটানের সঙ্গে কেন যৌথ নদী কমিশন থাকবে না। ভুটানের অনেক নদী উত্তরবঙ্গের উপর দিয়ে গেছে। প্রতি বছর প্রবল বৃষ্টির কারণে ওই নদীগুলোর পানিতে বন্যা হয়। তাই ইন্দো-ভুটান যৌথ নদী কমিশন অবিলম্বে তৈরি করা হোক।
এদিকে ‘নীতি আয়োগ’-এর বৈঠকে অপমানিত হয়েছেন- এই অভিযোগ তুলে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। পরে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি ভারতের গণমাধ্যমকে বলেন, বৈঠকে উপস্থিত অন্য বক্তাদের বলার জন্য ১০ থেকে ২০ মিনিট বরাদ্দ থাকলেও তাকে কেবলমাত্র ৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছে। এরই প্রতিবাদে তিনি বৈঠক বয়কট করলেন। বৈঠক ছেড়ে বেরোনোর মুখে মমতা জানান, ‘ভবিষ্যতে নীতি আয়োগ বৈঠকে আর কখনো অংশ নেব না।’